‘দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির উপর কোভিড ১৯- এর প্রভাব’ শীর্ষক জরীপ- এর ফলাফল নিয়ে মতবিনিময় সভা
করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সরকার মার্চ মাসের শেষের দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং তা দুই মাসেরও বেশি সময় অব্যাহত থাকে। যদিও মে মাসের গোড়ার দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত আকারে চালু হয়, কিন্তু অর্থনৈতিক কার্যক্রম সার্বিকঅর্থে এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এতে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তাদের কারও আয় হ্রাস পেয়েছে, কেউ চাকরি হারিয়েছেন, দোকানপাট এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধসহ এমনকি আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার মুখোমুখিও হয়েছেন অনেকে। আয় না থাকায় দরিদ্র মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টির সংকটে পড়েছে। বিশেষত শিশু, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের পুষ্টির অবস্থা এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দরিদ্র মানুষের কাছে কার্যকর সহায়তা পৌঁছে দিতে হলে একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি এখন সময়ের চাহিদা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির উপর কোভিড ১৯-এর প্রভাব’ শীর্ষক পরিচালিত জরিপের ফলাফল নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব বলেন। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এবং খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী ও আইসিসিও কোঅপারেশন বাংলাদেশের কর্মসূচি প্রধান মো. আবুল কালাম আজাদ। জরিপের তথ্য-উপাত্ত ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শেরপুর জেলা কমিটির সভাপতি নীলিম ম্রং, জামালপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, করোনার আগে আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির কথা বলতাম, তা তো অবশ্যই কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। করোনার শুরুতে কোনো গবেষণা ছাড়াই কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তার নির্দেশেই সরকার ইতিমধ্যে ৫ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। মা ও শিশুদের জন্য দুধসহ পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। নিম্ন আয় ও প্রান্তিক মানুষের যে চাহিদা তা অবশ্য শুধু এই খাদ্য সহায়তা দিয়েই পূরণ হওয়ার নয়। সরকার অর্থ সহায়তাও প্রদান করেছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ জরিপের ফলাফলকে মানতেই হবে যে, সকল মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা করোনাকালে সংকটের মধ্যে পড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্য, বিশেষত চাল সরবরাহের দিকটি কঠোরভাবে নজরদারি করছে। যদিও শুধু চাল দিয়েই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। করোনা একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে আরো মানুষ দারিদ্র্যে পতিত হতে পারে বলে আমরাও মনে করি। নগর এলাকায় আমরা ওএমএস নিশ্চিত করেছি। এখন আমরা কার্ডের বিনিময়ে এটা দিচ্ছি। ঢাকায় ১২০টি স্থানে স্টলের মাধ্যমে ওএমএসের চাল, আটা ইত্যাদি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা যে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ডাটাবেজ এখনও করতে পারিনি সেটি একটি বড় সমস্যা। যেজন্য প্রধানমন্ত্রী ৫০ লক্ষ পরিবারের জন্য যে অর্থ সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন তা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ১৫ লক্ষের মধ্যে ৬ লক্ষের তালিকায় সমস্যা রয়েছে, যা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে বছরব্যাপী দরিদ্র মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ফুড প্যাকেজ অব্যাহত রাখতে হবে, তাহলে পুষ্টিও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তার জন্য আরো ব্যাপকভিত্তিক গবেষণার দরকার রয়েছে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকারের উচিত দরিদ্রদের সহায়তা বাড়ানো, আর এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও এনজিওদেরকেও যুক্ত করা। এ মহামারীকালে আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি যে খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন থাকা কতটা জরুরি। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা এখানেই। সংবিধানে ‘অধিকার’ আকারে উল্লেখ না থাকায় মানুষ খাদ্যের জন্য আইনগত দাবি তুলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের যে প্রণোদনার ঘোষণা সেগুলো অবশ্যই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এরকম জরিপ নিয়মিত বিরতিতে চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশ এখন একটি জটিল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও অবস্থার উন্নতি যে খুব হয়েছে তা মনে হয় না। জরিপের উত্তরদাতাদের আয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করা গেলে আরো নানামাত্রিক বিষয় আমাদের সামনে চলে আসবে। আগামী দিনে আয়ের সুযোগ না বাড়লে দরিদ্র মানুষ খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে আরো নেতিবাচক পরিস্থিতিতে পতিত হবেন। টিকে থাকার জন্য মানুষের সুযোগগুলো কমে যাচ্ছে, এখন ধার দেয়ার মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম দিয়ে আমরা সকল দরিদ্র মানুষ তথা তাদের চাহিদাকে পূরণ করতে পারছি না। এজন্য দরিদ্র মানুষের একটি চলমান হালনাগাদ ডাটাবেজ থাকা দরকার। তাহলে খুব সহজেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহায়তাগুলো পৌঁছানো যাবে। ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, করোনাকালে জীবিকার পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির সংকটের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে আজকের আলোচনায়। কেননা পুষ্টির ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে যে অগ্রগতি তা এ মহামারীকালে ব্যাহত হয়েছে। যদিও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাত্রায় ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। সরকারকে অবশ্যই এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ জরিপে যে পাওয়া গেছে, সরকারি সহায়তা পেয়েছে অসহায় ও দরিদ্র শ্রেণির মাত্র অর্ধেক জনগোষ্ঠী, এ বিষয়টি নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে। এত প্রচারণার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে যে দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছে সেটা নিয়েও নতুন করে চিন্তা করতে হবে সবাইকে। নতুন যে জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যে পতিত হতে যাচ্ছে তারাসহ সকল দরিদ্র মানুষকে সহায়তার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় এনজিওদেরকেও কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দরিদ্র মানুষের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হলে কৃষির উৎপাদন অব্যাহত রাখা খুবই জরুরি এ সময়ে। সেজন্য কৃষকদেরকে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনকালে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এ জরিপের উদ্দেশ্য ছিল কোভিড-১৯ মহামারির ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের দরিদ্র মানুষের জীবিকা পরিস্থিতি, খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির অবস্থা বোঝা। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস ঝুঁকির মধ্যে দরিদ্র মানুষের সচেতনতার পরিস্থিতিও অন্বেষণ করা হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৩৭টি জেলায় দৈবচয়ন পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে অর্থনৈতিকভাবে ঝুকিপূর্ণ ৮৩৪ জন উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নগর ও গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ছিলেন নারী। উত্তরদাতাদের মধ্যে রিকশা ও ভ্যান চালক, স্কুটার ও ট্যাক্সি ড্রাইভার, পরিবহন শ্রমিক, ছোট দোকানদার, ফেরিওয়ালা, নাপিত, বিউটি পার্লারের কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, খন্ডকালীন গৃহকর্মী, ইটকল শ্রমিক, ছোট দোকানকর্মী, মালবাহী শ্রমিক, শিপিং ও ই-বাণিজ্য সরবরাহকারী শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এরকম নানা পেশার মানুষ ছিলেন। এদের বেশিরভাগই দিন এনে দিন খেয়ে বেঁচে থাকেন। এছাড়া ভিখারি, পথশিশু, প্রতিবন্ধী যারা প্রকৃতঅর্থে বেকার, এমন উত্তরদাতাও ছিলেন।
জরিপ অনুযায়ী, দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালে ৯৮.৩% দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৮৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির সমস্যায় পড়েছেন। দরিদ্র পরিবারগুলোর পাঁচ শতাংশই দিনে মাত্র একবেলা খেয়েছেন। এটি লক্ষণীয় যে, মহামারী শুরুর আগে উত্তরদাতাদের ৯১.৬ শতাংশ দিনে তিনবেলা এবং বাকিরা দু’বেলা খাবার গ্রহণ করতেন। যদিও বেশিরভাগ উত্তরদাতা সাধারণ সময়ে তিনবেলা খাবার গ্রহণ করতেন, কিন্তু সাধারণ ছুটির সময়ে বিভিন্ন বিভাগের ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ উত্তরদাতা তিনবেলা খাবার গ্রহণে সমস্যার মুখোমুখি হন বলে জানিয়েছেন।
সব বিভাগেই দরিদ্র লোকেরা পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের তীব্র অভাবে ভুগছিলেন, যা তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির সামনে ফেলে দিয়েছে। যদিও মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ এ সময় সাধারণ অসুস্থতায় ভুগেছেন বলে জানিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেটে খাবারের ঘাটতি বেশি ছিল। রংপুর অঞ্চলের দরিদ্ররা খাদ্য সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুষ্টিকর খাদ্য সংকটে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। অর্ধেক দরিদ্র মানুষ সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে কিছু খাদ্য ও অর্থ সহায়তা পেয়েছিলেন। প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। তুলনামূলকভাবে সহজ বলে এদের বেশিরভাগই দিনমজুর ও কৃষি শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন। তবে বোরো ধান কাটার মৌসুম ছিল বলে কৃষি শ্রমিকরা সাধারণ ছুটি চলাকালীন কাজ পেয়েছেন।
করোনভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত জীবিকার সাথে জড়িত দরিদ্র মানুষের আয়ের ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগেরই ন্যূনতম সঞ্চয় না থাকায়, আয়ের এ সংকটকালে তাদের খাদ্য গ্রহণ এবং পুষ্টির অবস্থার উপর বাড়তি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সকল উত্তরদাতাই করোনভাইরাস সম্পর্কে কম-বেশি জানেন। মূলত ঘরে অবস্থান করাকেই বেশিরভাগ উত্তরদাতা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক বলে জানিয়েছেন।
জরিপের প্রেক্ষিতে তিনি সুপারিশ করেন: দরিদ্র মানুষের জরুরি খাদ্য সহায়তা সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ (নগদ সহায়তা বা অন্যান্য) বৃদ্ধি করা; বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাসহ নগদ অর্থ মোবাইল পরিষেবা ব্যবহার করে নিয়মিত সুবিধাভোগীদের কাছে প্রেরণ করা; দরিদ্র শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা; দরিদ্র মানুষের জন্য জীবিকার সুযোগ নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্র, মধ্য ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের উদ্যোগের জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজগুলি অবিলম্বে কার্যকর করা; কৃষির সরবরাহ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা; কোভিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সচেতনতা (মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া) বৃদ্ধি করা; সর্বোপরি দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
RIGHT TO FOOD BANGLADESH
Write a comment: